স্বদেশ ডেস্ক:
আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থানে প্রতিবেশী পাকিস্তান যে ‘বেজায় খুশি’, গত সাত দিনে ইসলামাবাদের ব্যাখ্যা-বিবৃতিতে বোঝা গেছে বেশ। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উচ্ছ্বসিত মন্তব্য করেছেন, আফগানদের ‘দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত’ করেছে তালেবান।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের- ভারত তো বটেই; অভিযোগ আছে- পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং সেনাবাহিনী তালেবানকে দীর্ঘদিন ধরে মদদ দিয়ে আসছে। সরকারি তরফ থেকে অস্বীকার করা হলেও তালেবান-পোষণের কথা মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।
ওয়াশিংটন পোস্টে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমনকি এবারও অস্ত্রের মুখে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে তালেবানের আফগানিস্তান অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছে পাকিস্তান। কী কারণে পাকিস্তান তালেবানকে সমর্থন ও মদদ দেয়, সে ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু তালেবান তোষণ-পোষণের জন্য পাকিস্তানকে কি পরে পস্তাতে হবে না?
টাইম সাময়িকীর সাবেক সিনিয়র এডিটর, বর্তমানে ওয়াশিংটন পোস্টের বিদেশবিষয়ক কলামিস্ট ইশান থারুরের লেখায় সে রকমই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। তিনি এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রখ্যাত কলমযোদ্ধা হামিদ মীর, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফাহাদ হুমায়ুন এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাক্কানির প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দিয়ে তার লেখায় তুলে ধরেছেন।
ওয়াশিংটন পোস্টেই মতামত বিভাগে মীর সম্প্রতি লিখেছেন, ‘কাবুলে তালেবানের সামরিক দখল গত বছর দোহায় আফগান তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার শান্তিচুক্তির লঙ্ঘন। এখন আমরা অন্তহীন অনিশ্চিয়তার মুখে পড়ে গেছি। এর প্রভাব নিশ্চিতভাবে পাকিস্তানের ওপর পড়বে, এবং সম্ভবত অন্য কোনো আঞ্চলিক শক্তির কাছেও এত চাপে পাকিস্তান পড়েনি কখনো।’
তালেবান যে পাঁচভাবে পাকিস্তানের ক্ষতি সাধন করতে পারে- এ নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টেই এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। এতে হুমায়ুন লিখেছেন, পাকিস্তান নতুন করে আফগান শরণার্থীর উপচেপড়া স্রোতের কবলে পড়বে। তালেবান ক্ষমতায় থাকলেও ইসলামাবাদবিরোধী জঙ্গিঝুঁকি কমবে বলে মনে হয় না। এমনকি উগ্রবাদী ইসলামি গোষ্ঠী ও পাশতুন বিদ্রোহীরা পাকিস্তানে তাদের সক্রিয়তা বাড়াতে পারে। আর তালেবান-সংশ্লিষ্টতার জন্য পাকিস্তানের ওপর পশ্চিমাদের ক্ষোভ যে সামনের দিনগুলোয় চরম হবে, সেও সহজেই অনুমেয়।
আমেরিকার আরেক প্রভাবশালী গণমাধ্যম ফরেন অ্যাফেয়ার্সে এক লেখায় হাক্কানি লিখেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের এই নবউত্থান ‘পাকিস্তানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হওয়া থেকে আরও অনেকখানি পিছিয়ে দিল।’ বর্তমানে ওয়াশিংটন প্রবাসী এই সাবেক দূত মনে করেন, তালেবান বিদ্রোহে সহযোগিতা করার জন্য একদিন পাকিস্তানকে পস্তাতেই হবে।